ব্যাংক খাতে অস্বাভাবিক কেন্দ্রীকরণে প্রতিযোগিতা কমছে, ঝুঁকি বাড়ছে, এবং গ্রাহক আস্থার সংকটের আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে।
স্টাফ রিপোর্টার
বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে এক অস্বাভাবিক প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে—মাত্র হাতে গোনা ১০টি ব্যাংক দ্রুত ফুলেফেঁপে উঠছে, আর বাকি ব্যাংকগুলো টিকে থাকার সংগ্রামে ব্যস্ত। বাইরে থেকে এটি সাফল্যের চিত্র মনে হলেও, অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ব্যাংকিং খাতের এই ভারসাম্যহীনতা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিকে বড় ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিতে পারে।
প্রতিযোগিতা কমে যাচ্ছে
মোট আমানত, ঋণ ও লেনদেনের বড় অংশ যখন কয়েকটি ব্যাংকের দখলে চলে যায়, তখন ছোট ও মাঝারি ব্যাংকগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে। বাজারে প্রতিযোগিতা হ্রাস পেলে গ্রাহক সেবা, সুদের হার ও ব্যাংকিং উদ্ভাবনেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
“Too Big To Fail” ঝুঁকি
বিশ্বব্যাপী পরিচিত এই ধারণার অর্থ হলো—কোনো বড় ব্যাংক সমস্যায় পড়লে পুরো অর্থনীতিই বিপর্যস্ত হতে পারে। যেসব ব্যাংক অস্বাভাবিকভাবে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাদের ব্যবস্থাপনায় সামান্য ত্রুটি দেখা দিলেও তা দেশের অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা দিতে পারে।
ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের আশঙ্কা
অতিরিক্ত তারল্য পাওয়া বড় ব্যাংকগুলো অনেক সময় প্রভাবশালী গোষ্ঠীকে অযাচিত ঋণ দিয়ে থাকে। এতে খেলাপি ঋণ বাড়ে এবং ব্যাংক খাতের দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়ে।
আমানতকারীর জন্য হুমকি
জনগণের বড় অঙ্কের আমানত যদি সীমিত সংখ্যক ব্যাংকে কেন্দ্রীভূত হয় এবং হঠাৎ কোনো একটি ব্যাংক সংকটে পড়ে, তবে বিপুল অর্থ আটকে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। এর ফলে ব্যাংকিং খাতে আস্থার সংকটও দেখা দিতে পারে।
বৈষম্য বাড়ছে
বড় ব্যাংকগুলো সাধারণত লাভজনক খাতেই মনোযোগ দেয়। ফলে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, গ্রামীণ অর্থনীতি ও মধ্যবিত্ত ব্যবসা পর্যাপ্ত তহবিল থেকে বঞ্চিত হয়, যা দীর্ঘমেয়াদে আয়ের বৈষম্য বাড়ায়।
শেষকথা
অর্থনীতিবিদদের মতে, হাতে গোনা কয়েকটি ব্যাংকের ফুলেফেঁপে ওঠা কোনো সাফল্যের চিত্র নয়; বরং এটি একটি সতর্ক সংকেত। ব্যাংক খাতের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যকর নীতি, কঠোর নজরদারি এবং ন্যায্য প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা জরুরি। অন্যথায় সামান্য একটি বিপর্যয়ও পুরো অর্থনীতিকে নড়বড়ে করে দিতে পারে।

0 Comments