বাংলাদেশের ১০টি ব্যাংক সংকটে, খুঁজছে টিকে থাকার পথ
বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত বর্তমানে চ্যালেঞ্জের মুখে, বিশেষ করে কয়েকটি ব্যাংক আর্থিক সংকট কাটিয়ে উঠতে হিমশিম খাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট আর্থিক বিশ্লেষকদের মতে, মূলত অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম, খেলাপি ঋণের উচ্চ হার এবং নগদ অর্থের সংকটের কারণে এই ব্যাংকগুলো টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
সংকটে থাকা ১০টি ব্যাংক
বর্তমানে যে ১০টি ব্যাংক সবচেয়ে বেশি চাপে রয়েছে, সেগুলো হলো:
পদ্মা ব্যাংক – একসময় ফারমার্স ব্যাংক নামে পরিচিত এই ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দুর্নীতির কারণে সংকটে পড়েছে।
আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক – দীর্ঘদিন ধরেই এটি তারল্য সংকটে ভুগছে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকটে রয়েছে।
ন্যাশনাল ব্যাংক – পরিচালনা পর্ষদের দ্বন্দ্ব ও ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতার কারণে ব্যাংকটির আর্থিক অবস্থা নাজুক।
গ্লোবাল ইসলামিক ব্যাংক – নতুন নামকরণ হলেও ব্যাংকটি তার পুরোনো সংকট কাটিয়ে উঠতে পারেনি।
ইউনিয়ন ব্যাংক – ঋণ ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম ও খেলাপি ঋণের উচ্চ হারের কারণে সমস্যায় পড়েছে।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামিক ব্যাংক – তারল্য সংকট ও আমানতকারীদের আস্থাহীনতায় ভুগছে।
বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক – অব্যবস্থাপনা এবং আর্থিক দুর্বলতা ব্যাংকটির বড় সমস্যা।
জনতা ব্যাংক – রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এই ব্যাংকটি বড় অঙ্কের খেলাপি ঋণের চাপে রয়েছে।
এক্সিম ব্যাংক – বিভিন্ন অনিয়ম ও তারল্য সংকটের কারণে চাপের মধ্যে রয়েছে।
বেসিক ব্যাংক – দুর্নীতি ও খেলাপি ঋণের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাংকগুলোর একটি।
সংকটের মূল কারণ
বিশ্লেষকদের মতে, এসব ব্যাংকের দুর্বল আর্থিক অবস্থার জন্য প্রধানত নিম্নলিখিত কারণগুলো দায়ী:
- খেলাপি ঋণের উচ্চ হার: অনেক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে, যা তাদের মূলধনের ঘাটতির প্রধান কারণ।
- পরিচালনা পর্ষদের দুর্বলতা: অনেক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে, যা অনিয়মের সুযোগ তৈরি করেছে।
- তারল্য সংকট: আমানতকারীদের আস্থার অভাবের কারণে অনেকে ব্যাংক থেকে অর্থ তুলে নিচ্ছেন, যা নগদ অর্থের ঘাটতি সৃষ্টি করছে।
- প্রশাসনিক দুর্নীতি: বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সম্ভাব্য সমাধান
বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে কিছু সংস্কারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে:
- ব্যাংকগুলোর জন্য কড়াকড়ি নিয়মকানুন প্রণয়ন
- খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ
- ব্যাংকিং খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা
- তারল্য সংকট মোকাবিলায় বিশেষ তহবিল গঠন
তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শুধুমাত্র প্রশাসনিক পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়। ব্যাংকগুলোর নিজস্ব ব্যবস্থাপনা দক্ষতা বাড়াতে হবে এবং গ্রাহকদের আস্থা ফেরাতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
উপসংহার
বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত বর্তমানে কঠিন সময় পার করছে। সংকটাপন্ন ব্যাংকগুলো যদি দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে পুরো আর্থিক ব্যবস্থার ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও কঠোর নজরদারি না থাকলে এসব ব্যাংকের ভবিষ্যৎ আরও অন্ধকার হতে পারে।
0 Comments