Ticker

6/recent/ticker-posts

Ad Code

ধার দিয়ে ইসলামী ব্যাংককে টিকিয়ে রাখার প্রচেষ্টা: সফলতা কতটা সম্ভব?


 ধার দিয়ে ইসলামী ব্যাংককে টিকিয়ে রাখার প্রচেষ্টা: সফলতা কতটা সম্ভব?

বর্তমানে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে ইসলামী ব্যাংক ব্যাপক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। এই অবস্থায় ব্যাংকটি টিকিয়ে রাখতে ধার প্রদান একটি অন্যতম পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হয়েছে, যা নিয়ে ইতিমধ্যে নানা ধরনের আলোচনা চলছে। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, এই পদ্ধতিতে ব্যাংকটিকে দীর্ঘমেয়াদে কার্যকরভাবে স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হবে কি না। চলুন, একজন ব্যাংক বিশ্লেষক হিসেবে এই বিষয়টি বিশ্লেষণ করা যাক।

ইসলামী ব্যাংকের বর্তমান পরিস্থিতি

ইসলামী ব্যাংক, একসময় বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ইসলামিক ফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি, বর্তমানে তার ঋণ খেলাপির মাত্রা ও মুনাফা হ্রাসের কারণে সমস্যায় পড়েছে। ব্যাংকের বেশ কিছু বড় ঋণ সংস্থাগুলো বর্তমানে খেলাপি হওয়ায় ব্যাংকের তহবিল সংকট বেড়েছে। আর্থিক সংকট মোকাবিলায় ব্যাংকটির প্রয়োজনীয় নগদ অর্থের যোগান দিতে ধার প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ধার প্রদান কেন প্রয়োজনীয়?

ইসলামী ব্যাংকের ক্ষেত্রে যে তহবিল সংকট দেখা দিয়েছে, তা সমাধান করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ধার প্রদানের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক নগদ প্রবাহ বৃদ্ধি করার পদক্ষেপ নিয়েছে। এই পদক্ষেপের লক্ষ্য হলো ব্যাংকটির স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা এবং গ্রাহকদের আস্থা ফিরিয়ে আনা। আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হলে এটি ব্যাংকের জন্য একটি স্বস্তির নিঃশ্বাসের মতো কাজ করবে এবং সাময়িকভাবে ব্যাংকের কার্যক্রম সচল রাখতে সাহায্য করবে।

সফলতা কতটা সম্ভব?

একটি ব্যাঙ্কে ধার প্রদান তার শুদ্ধিকরণের প্রাথমিক পদক্ষেপ হতে পারে। তবে, ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক স্বাস্থ্য উন্নত না হলে ধার প্রদান দীর্ঘমেয়াদে সমস্যা সমাধানে বিশেষ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে না। ধারের মাধ্যমে সাময়িকভাবে নগদ প্রবাহের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব হলেও, ব্যাংকের মূল সমস্যাগুলো যদি সমাধান না করা হয়, তবে এই পদক্ষেপ ক্ষণস্থায়ী সমাধান হিসেবেই থেকে যাবে।

সমস্যার মূলে ফিরে দেখা

ইসলামী ব্যাংকের মূল চ্যালেঞ্জগুলো শুধুমাত্র তহবিল সংকটে সীমাবদ্ধ নয়। ব্যাংকের ভেতরে সুশাসনের অভাব, ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ প্রদানের নীতি, এবং অর্থায়নের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সতর্কতার অভাবের কারণে এর মুনাফা ক্রমশ নিম্নমুখী। শুধু ধার প্রদানের মাধ্যমে ব্যাংকটি সম্পূর্ণরূপে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না, যদি না ব্যাংকটি তার ব্যবস্থাপনায় কার্যকর সংস্কার আনে।

কিছু সুপারিশ

১. সুশাসন ও জবাবদিহিতার ওপর জোর দেওয়া: ব্যাংকের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে কঠোরভাবে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২. ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় উন্নয়ন আনা: ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে যথাযথ মূল্যায়ন ও সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। ৩. আস্থা ফেরানোর জন্য প্রণোদনা চালু করা: গ্রাহক ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনের জন্য ব্যাংককে আরও শক্তিশালী ও উন্নত কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।

উপসংহার

ইসলামী ব্যাংককে ধার দিয়ে টিকিয়ে রাখার প্রচেষ্টা একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং সঠিক পদক্ষেপ, তবে এটিই একমাত্র সমাধান নয়। দীর্ঘমেয়াদে ব্যাংকটির স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে একটি কার্যকর ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা এবং সুশাসনের ওপর গুরুত্বারোপ অপরিহার্য। এই ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও ব্যাংকটির পরিচালন ব্যবস্থা একযোগে কাজ করলে ইসলামী ব্যাংককে নতুনভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পাওয়া যেতে পারে।




Post a Comment

0 Comments