Ticker

6/recent/ticker-posts

ইসলামি ব্যাংক কি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে? পারলে কত দিন সময় লাগবে?

 ইসলামি ব্যাংক কি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে? পারলে কত দিন সময় লাগবে?

বাংলাদেশের আর্থিক খাতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ইসলামি ব্যাংকিং। জনসাধারণের মধ্যে সুদের পরিবর্তে শরিয়াহ্‌-ভিত্তিক অর্থব্যবস্থার প্রতি আস্থা, এবং প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংকিং বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রেখে চলেছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে কিছু অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং প্রশাসনিক অনিয়ম ইসলামি ব্যাংকিং খাতের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তাই, প্রশ্ন উঠেছে: ইসলামি ব্যাংক কি আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে? আর এটি সম্ভব হলে, তা কতদিন সময় নেবে?

বর্তমান চ্যালেঞ্জসমূহ

ইসলামি ব্যাংকিং খাতে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলোকে মূলত চারটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা যেতে পারে:

1. প্রশাসনিক দুর্বলতা ও অনিয়ম:

বেশ কয়েকটি ইসলামি ব্যাংকে ঋণ বিতরণে স্বচ্ছতার অভাব এবং বড় অঙ্কের খেলাপি ঋণ সমস্যা দেখা দিয়েছে।

2. নগদ অর্থ সংকট:

খেলাপি ঋণের উচ্চ হার এবং ঋণ পুনঃঅর্থায়নের সীমিত সুযোগ ব্যাংকগুলোর নগদ অর্থের প্রাপ্যতায় প্রভাব ফেলেছে।

3. গ্রাহক আস্থা:

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিছু ব্যাংকের কার্যক্রম নিয়ে গণমাধ্যমে আসা নেতিবাচক খবর গ্রাহকদের আস্থা সংকটে ফেলেছে।

4. নিয়ন্ত্রক চাপে স্থায়িত্ব বজায় রাখা:

বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অন্যান্য আর্থিক নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো কঠোর নিয়মনীতি আরোপ করায় কিছু ইসলামি ব্যাংক আর্থিক ভারসাম্য বজায় রাখতে হিমশিম খাচ্ছে।

ঘুরে দাঁড়ানোর উপায়

ইসলামি ব্যাংকগুলো আবার শক্তিশালী অবস্থানে ফিরে যেতে পারে যদি তারা সঠিক কৌশল গ্রহণ করে। এর জন্য প্রয়োজন:

1. স্বচ্ছ প্রশাসনিক সংস্কার:

‍ঋণ বিতরণ এবং পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে প্রযুক্তিগত অটোমেশন এবং বাহ্যিক নিরীক্ষা প্রক্রিয়া কার্যকর করতে হবে।

2. খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ:

খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধার এবং ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ বিতরণ হ্রাস করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

3. শরিয়াহ্‌ কমপ্লায়েন্স জোরদার:

শরিয়াহ্‌-ভিত্তিক পরিচালনার প্রতি কঠোর মনোযোগ দিয়ে গ্রাহকদের আস্থা পুনরুদ্ধার সম্ভব।

4. গ্রাহক আস্থা পুনরুদ্ধার:

নতুন প্রযুক্তি ও পণ্য সেবা নিয়ে আসা এবং দায়িত্বশীল ব্যাংকিং কার্যক্রমের মাধ্যমে ইতিবাচক ইমেজ তৈরি করতে হবে।

5. প্রণোদনা প্যাকেজ:

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তরফ থেকে প্রণোদনা বা লিকুইডিটি সাপোর্ট দিয়ে ব্যাংকগুলোর আর্থিক স্থায়িত্ব পুনরুদ্ধারে সহায়তা করতে হবে।

সময়সীমা

ইসলামি ব্যাংকিং খাতের পুনরুদ্ধার একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। যদি উপরে বর্ণিত পদক্ষেপগুলো কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা হয়:

স্বল্পমেয়াদে (৬ মাস থেকে ১ বছর): নগদ প্রবাহের সংকট কমে আসতে পারে এবং গ্রাহকদের আস্থা কিছুটা ফিরে আসতে পারে।

মধ্যমেয়াদে (১ থেকে ৩ বছর): খেলাপি ঋণ সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আসবে এবং সার্বিক ব্যাংকিং কার্যক্রম স্থিতিশীল হবে।

দীর্ঘমেয়াদে (৩ থেকে ৫ বছর): ইসলামি ব্যাংকিং খাত পুরোপুরি স্থিতিশীল অবস্থায় ফিরে আসতে পারে এবং লাভজনক কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে সক্ষম হবে।

উপসংহার

ইসলামি ব্যাংকগুলো যদি সঠিক কৌশলগত পরিবর্তন এবং কার্যকর ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করতে পারে, তবে তারা অবশ্যই ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। তবে এর জন্য প্রয়োজন সময়, সুসংগঠিত নেতৃত্ব, এবং আর্থিক খাতের সুষ্ঠু তদারকি। বাংলাদেশে ইসলামি ব্যাংকিংয়ের প্রতি মানুষের আস্থা এখনো দৃঢ় রয়েছে, যা ঘুরে দাঁড়ানোর প্রধান অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।


Post a Comment

0 Comments