পড়াশোনায় মনোযোগ ধরে রাখার উপায়।
![]() |
পড়াশোনায় মনোযোগ ধরে রাখার উপায় |
ইলেকট্রনিক গ্যাজেট থেকে দূরে থাকুন
ইলেকট্রনিক ডিভাইস বিশেষ করে মোবাইল ফোন বর্তমানে পড়াশোনার ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা । গবেষণায় দেখা গেছে, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের মস্তিষ্ক খুব বিক্ষিপ্ত অবস্থায় থাকে । ফেসবুক, রিলস ও ইউটিউব ব্যবহারকারীরা কোনো বিষয়ে বেশিক্ষণ মনোনিবেশ করতে পারেন না । কিছু ক্ষেত্রে তা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয় । দীর্ঘসময় পড়াশোনা করতে চাইলে শুরুতেই ডিভাইস দূরে রেখে সোশ্যাল মিডিয়া ছেড়ে অফলাইনে থাকতে হবে, যাতে কোনো রকম বিঘ্ন না ঘটে । মস্তিষ্ক সম্পূর্ণ ফ্রি না থাকলে পড়াশোনায় দীর্ঘক্ষণ মনোনিবেশ করা সম্ভব নয় ।
লক্ষ্য স্থির করা
একটি সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য ঠিক করতে হবে এবং সে অনুযায়ী পড়ার পরিকল্পনা করতে হবে । প্রয়োজনে একটি দীর্ঘ লক্ষ্যকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে । যেমন – আগামী ছয় মাস পর যদি কোনো পরীক্ষার তারিখ থাকে এবং লক্ষ্য থাকে যদি সম্পূর্ণ সিলেবাস শেষ করা । তবে প্রথমেই সম্পূর্ণ সিলেবাসকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে নিতে হবে । এ ক্ষেত্রে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হতে হবে যে, আমাকে প্রথম সপ্তাহে এই এই টপিক পড়ে শেষ করতে হবে । লক্ষ্যের প্রতি অবিচল না থাকলে পড়ায় মনোযোগ ধরে রাখা যাবে না।
খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা
খাদ্যাভ্যাস একজন ছাত্রের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ । জাঙ্ক ফুড ও অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার পরিহার করা ও সহজপাচ্য খাবার গ্রহণ করা শরীরের জন্যও উপকারী । আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে মৌসুমি ফল খাওয়া শরীরের জন্য খুবই উপকারী । দীর্ঘসময় পড়াশোনা করার জন্য আমাদের খাদ্যাভ্যাসের ও পরিবর্তন নিয়ে আসতে হয় । তা ছাড়া অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ শরীরে ক্লান্তি ও ঘুম ঘুম ভাব সৃষ্টি করে । খাবার টেবিলের পাশে পানির বোতল নিয়ে বসলেও ভালো । প্রয়োজনীয় সবকিছু হাতের কাছে রাখা পড়তে বসার আগে সব কাজ শেষ করে ও প্রয়োজনীয় সবকিছু পাশে রেখে তারপর পড়াশোনা করা উচিত, যাতে আর বারবার উঠতে না হয় । যেমন কেউ পড়তে বসল হঠাৎ করে মনে হলো তার কাছে নীল কলম নেই, এরপর সে ওই কলম সংগ্রহ করার জন্য আবার টেবিল ছেড়ে উঠে গেল । এভাবে বারবার পড়া ছেড়ে উঠলে পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটে । আবার নতুন করে পড়া শুরু করতে হয় ।
আরও পড়ুন :-
পড়ার পরিবেশ তৈরি করা
খেলতে গেলে যেমন খেলার স্থান উপযুক্ত হতে হয় । তেমনি পড়ার জন্য প্রয়োজন পড়ার পরিবেশ । দীর্ঘসময় পড়ার জন্য একটি উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা চাই । পড়ার স্থানটি কোলাহল মুক্ত ও জঞ্জাল মুক্ত হওয়া প্রয়োজন । এর পাশাপাশি পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থাও থাকা দরকার । পড়ার টেবিলটি গোছানো হলে পড়ায় মনযোগ দেওয়া সহজ হয় । পড়তে শুরু করার আগেই কী কী বিষয় পড়া হবে, তা ঠিক করে সেসব বিষয় হাতের কাছে রেখে পড়া শুরু করতে হবে ।
চাই পর্যাপ্ত ঘুম ও শারীরিক ব্যায়াম
দৈনিক ৬- ৮ ঘণ্টা ঘুম শরীরের জন্য অত্যন্ত দরকারি । বর্তমানে অতিরিক্ত ইলেকট্রনিকস ডিভাইস ব্যবহার করার কারণে দেরি করে ঘুমানোর একটি অভ্যাস ছাত্রদের মাঝে প্রকট আকার ধারণ করেছে । মস্তিষ্ক ঠান্ডা রেখে দীর্ঘসময় পড়াশোনার জন্য পর্যাপ্ত ঘুম দরকার । রাতে কোনো কারণে ঘুমের বিঘ্ন ঘটলে আমাদের উচিত অন্য কোনো সময় ঘুমিয়ে শরীর ঠিক রাখা । চিকিৎসকদের মতে, ঘুমের অভাব মানুষের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয় । শারীরিক ব্যায়ামও একজন মানুষের জন্য অত্যাবশ্যক । বিশেষ করে ঘুম থেকে ওঠার পর কিছু হালকা এক্সারসাইজ শরীরকে সারা দিন চনমনে রাখতে পারে । এর পাশাপাশি যদি খেলার সুযোগ থাকে তাহলে তা মিস করা কোনোভাবেই উচিত হবে না । খেলাধুলা মানুষের মস্তিষ্ক চাঙা রাখে, যা পড়াশোনা করার জন্য খুবই দরকারি ।
টেবিলে বসার অভ্যাস করা।
দীর্ঘসময় পড়াশোনা করাটা অভ্যাসের ব্যাপারও বটে । হঠাৎ করেই এ অভ্যাস রপ্ত করা যায় না । বলা হয়ে থাকে যে, নতুন কোনো অভ্যাস আয়ত্ত করার জন্য টানা ২১ দিন সে নতুন অভ্যাস অনুযায়ী চলতে হয় । ২১ দিন কোনো কিছু টানা করলে তা অভ্যাসে পরিণত হয় । শুরুতে পড়াশোনায় মনযোগ না আসলেও টেবিল ছেড়ে ওঠা যাবে না । বই বা পড়ার বিষয়বস্তু নিয়ে টেবিলেই বসে থাকতে হবে । একসময় তা অভ্যাসে পরিণত হবে ও পড়ায় মনঃসংযোগ তৈরি হবে । জে কে রাওলিং ও স্টিফেন কিংয়ের মতো বিখ্যাত লেখকেরাও ঘণ্টার পর ঘণ্টা টেবিলে কিছু না লিখে বসে কাটিয়েছেন । এটা শুধু মনের একাগ্রতা তৈরি করার জন্য ।
নিয়মিত সৃষ্টিকর্তার নিকট প্রার্থনা করার মাধ্যমে মনকে কেন্দ্রীভূত করা যায় । মুসলিম হলে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া অন্যান্য ধর্মের হলে নিজ নিজ ধর্মের প্রার্থনা করা উচিত । অনেক বিশেষজ্ঞগণ এ ক্ষেত্রে প্রতিদিন সকালে মেডিটেশন করার কথাও বলেছেন । পড়াশোনার পাশাপাশি ধর্মীয় প্রার্থনা যে কোনো ব্যক্তির মনে প্রশান্তি তৈরি করে, যা দীর্ঘক্ষণ পড়াশোনায় সহায়ক ।
0 Comments